মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন

গরিবের ডাল-ভাতের খরচ আরও বাড়ছে

গরিবের ডাল-ভাতের খরচ আরও বাড়ছে

স্বদেশ ডেস্ক:

রাজধানীর বাজারে সব ধরনের চালের দাম বাড়তি। দীর্ঘ সময় ধরে স্বস্তি দিচ্ছে না মসুর ডালও। চলতি সপ্তাহে আবারও বাড়তে শুরু করেছে দাম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে চাল-ডালের এ বাড়তি দাম ভোগাচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের। ডাল-ভাতের খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে গরিব ও খেটে খাওয়া জনগোষ্ঠী। রাজধানীর কদমতলীর সাদ্দাম মার্কেট বাজারে গতকাল ডাল কিনতে এসে মাথায় হাত দিনমজুর মো. আলী আক্কাসের। আক্ষেপ নিয়ে বললেন, ‘মাঝে কিছুদিন মোটা দানার মসুর ডাউল ৮৫ টাকা কেজি পাইলেও আইজ কিনতে আইসা দেখতাছি ৯০-৯২ টাকা। আবার বলতাছে কয়দিন পরে নাকি ৯৫ টাকা হইবো। চিকন দানাটার দাম চাইতাছে এখন ১২০ টাকা, কিছুদিন আগেও পাইছি ১১০ টাকায়। এক লাফে দাম এত্ত বাড়লে আমরা গরিবরা কই যামু?’

আক্কাস বলেন, ‘রাজমিস্ত্রির কাজে দিন চুক্তিতে জোগালি দিয়া যা কামাই তা দিয়া মাছ-মাংস কিনা খাওন যায় না। ফার্মের মুরগির ডিমও সাধ্যের বাইরে। শীতে তরিতরকারিও খাইতাছি চড়া দাম দিয়া। এমন দিনে পরিবার নিয়া একটু যে ডাইল-ভাত খামু তারও উপায় নাই। চাউলের দামও বাইড়া গেছে।’ ওই বাজারের ব্যবসায়ী মো. মিলন হোসেন জানান, মসুর ডালের দাম অনেক আগে থেকেই চড়া। মাঝে মোটা দানার দাম সমান্য কমেছিল, এখন আবার ৯০-৯২ টাকায় উঠেছে। আর চিকন দানার মসুর ডালের দাম ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এখন ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মূলত সপ্তাহ দুই ধরে পাইকারিতে দাম বাড়ছে।

মালিবাগ বাজারের খুচরা বিক্রেতা

মাসুদ রানা বলেন, ‘আমাদের বাজারে মোটা দানা ৯০ থেকে ৯৫ টাকা এবং ভালোমানের দেশি চিকন দানার মসুর ডাল ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দিন দিন পাইকারিতে দাম আরও বাড়ছে। আগে দেশি মসুর ডালের যে বস্তা (৫০ কেজি) ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ৬৫০ টাকায় কেনা গেছে, এখন তা ৫ হাজার থেকে ৫ হাজার ২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এখনো বাড়তি দামের ডাল বাজারে পুরোপুরি ওঠেনি। উঠলে খুচরায় দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবও বলছে, বাজারে সব ধরনের মসুর ডালের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে ডাল ব্যবসায়ী সমিতির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এক মাসের ব্যবধানে রাজধানীর পাইকারি বাজারে মোটা দানার মসুর ডালে দাম ১২ শতাংশ ও দেশি ভালোমানের দাম ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. শফী মাহমুদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘ডালের দাম বৃদ্ধি এখনো অব্যাহত রয়েছে। চলতি মাসে পাইকারি পর্যায়ে মোটা দানার মসুরের দাম ১০ টাকা এবং দেশি মসুর ডালের দাম ১২ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত মাসে রাজধানীর পাইকারি বাজারে মোটা দানার কেজি ৮০ থেকে ৮১ টাকা থাকলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯১ টাকা দরে। একই সময়ের ব্যবধানে দেশি মসুরের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা কেজি, গত মাসে যা ৯০ থেকে ৯২ টাকা কেজিতেও বিক্রি করা গেছে।’

বাজারে ডালের সরবরাহ ঘাটতির ফলেই দাম বাড়ছে বলে উল্লেখ করে এ ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমদানি কমেছে। অন্যদিকে বৃষ্টি ও আবহাওয়াজনিত কারণে দেশি ডালের স্বাভাবিক সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটেছে। মাঝে টানা কিছুদিন বৃষ্টিপাতের পর থেকেই ডালের বাজার চড়া। বৃষ্টির ফলে ক্ষেতে দেশি ডালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এমন সময় মজুদকারীরাও বাজারে ডাল কম করে ছাড়ছেন। আড়তে যে ডাল পাওয়া যাচ্ছে তাও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।’

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘করোনার পর থেকে সব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। সরকারের উচিত চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনির মতো অতি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখা। চাল, ডাল, তেলের মতো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে গরিব ও খেটে খাওয়া জনগোষ্ঠীর ওপর চাপ বাড়ে। এটা কাম্য নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সরবরাহ সংকট, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দেন। সরকারের কাছে চাহিদা, উৎপাদন, মজুদ ও সরবরাহের প্রকৃত হিসাব থাকলে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়তে পারে না। সুতরাং অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে সরকারের নিবিড় নজরদারি ও তদারকি থাকা দরকার।’

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছর দেশে মসুর ডালের চাহিদা প্রায় ৫ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬৬ হাজার টন। আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় উৎপাদন আরও বাড়াতে সরকারের নজর দেওয়া উচিত বলে জানান ক্যাব সভাপতি।

চলতি মাসের শুরু থেকে চালের বাজারেও সব ধরনের চালের দাম চড়া রয়েছে। আড়াই সপ্তাহের ব্যবধানে চিকন চালের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত। বাজারে মাঝারি আটাশ চালের দাম দুই থেকে তিন টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৮ টাকায়। আগে এ চাল পাওয়া গেছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যে। সপ্তাহখানেক সময়ের ব্যবধানে গরিবের মোটা চালের দামও ১ থেকে ২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কিছুদিন আগেও যে মোটা চাল ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে, এখন তা ৪৬ টাকা। অপরদিকে নুরজাহানের পাইজামের মতো ভালোমানের মোটা চালের কেজি ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877